ব্রিটিশ শাসনামলে সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট হিরাম কক্সকে পাঠানো হয় এই হলুদ ফুলের দেশে, এবং তিনি এসেই একটা বাজার স্থাপন করে ফেলেন। হিরাম কক্সের নাম অনুসারেই বাজারটির নামকরন করা হয়- কক্সবাজার! এবং পরবর্তীতে জেলার নামও হয়ে ওঠে তাই।
চোখের-মনের খোরাক যোগাবার মতন উপাদানে ভরপুর বাংলাদেশের অহংকার এই কক্সবাজার জেলা। তবে সবচাইতে আকর্ষণীয় সম্ভবত এর সমুদ্র সৈকত। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে জীবনে বেড়াতে একবার যেতে চান না, এমন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ শত খুঁজেও মিলবে কিনা সন্দেহ।
কল্পনায় এলো কি দৃশ্যটা? যতটুকুন আপনি কল্পনা করতে পারলেন, তাইচাইতেও বহু বহু গুন বেশী সুন্দর সূর্যাস্তের সেই দৃশটি। সৈকতে গেলেই দেখতে পাবেন অসংখ্য পর্যটক ক্যামেরা বন্দী করে রাখার চেষ্টা করছে অতুলনীয় সেই রূপকে। সাথে ক্যামেরা নেই? তাতেও নেই অসুবিধা। সৈকতেই পেয়ে যাবে অসংখ্য পেশাদার ফটোগ্রাফার, যারা কিনা মনের মতন করে তুলে দেবে আপনার প্রিয় মুহূর্ত গুলোর ছবি। আর ফোন নাম্বার দিলে ছবি প্রিন্ট করিয়ে পৌঁছে দেবে আপনার হোটেল রুম পর্যন্ত।
সূর্য উদয় দেখবার আকর্ষণ তো আছেই, সাথে আছে শামুক ঝিনুক কুড়োবার আনন্দ। জোয়ারের টানে ভেসে আসে প্রচুর শামুক, ঝিনুক, শঙ্খও, কড়ি, তারামাছ আরও কত কি! কথিত আছে, সমুদ্র নাকি কিছু নিয়ে নিলে তা আবার ঠিক ঠিক ফিরিয়ে দেয়। কক্সবাজারে সকাল বেলায় সৈকতে গেলে হাতে নাতে প্রমাণ পেয়ে যাবেন সেই সত্যটিরও।
কেবল সমুদ্র দর্শন আর সমুদ্র স্নান নয়, সৈকতে পেয়ে যাবেন খেলাধুলা ও বিনোদনের নানান সুব্যবস্থা। আছে ওয়াটার বাইক, স্পীড বোটে চেপে সমুদ্র ভ্রমণের ব্যবস্থা। চাইলে করতে পারেন সার্ফিং সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ের বুকে। এছাড়া সৈকতের নরম বালু ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলার জন্য খুব আরামদায়ক। শিশুরা কেবল নয়, বড়রাও এখানে মেতে ওঠে বালির ঘর তৈরির খেলায়। মার্কেটে একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন রঙ্গিন সব ঘুড়ি। নানান আকৃতির এই রঙ্গিন ঘুড়ি আপনার মনোরঞ্জন করবেই করবে নিশ্চিত। জেনে রাখুন, প্রতিবছর কক্সবাজারে আয়োজিত হয় ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব, এবং দেশ বিদেশের অসংখ্য মানুষ যোগ দিয়ে থাকেন এই উৎসবে।
গোটা কক্সবাজার জুড়েই আছে রসনা বিলাসের নানান রকম সুব্যবস্থা। এবং সমুদ্র সৈকতেও তার ব্যতিক্রম নেই এতটুকু। ভোর হোক কিংবা সন্ধ্যা, জনসমাগম শুরু হলেই সৈকতে মিলবে নানান রকম খাবার। ঠাণ্ডা পানি থেকে শুরু করে নানান রকম কোমল পানীয়, ডাব, চা-কফি, ঝালমুড়ি, ডিম সিদ্ধ, তরতাজা মৌসুমি ফল ইত্যাদি আপনার কাছে নিয়ে আসবে ফেরিওয়ালারাই। আরেকটু ভরপেট কিছু খেতে চাইলে সৈকত ঘেঁষেই আছে নানা রকম ছোট ছোট রেস্তরাঁ। মোটামুটি ২৪ ঘণ্টাই এখানে মিলবে সুস্বাদু খাবার। সামুদ্রিক মাছের নানান রকম ডিশ থেকে শুরু করে পাবেন চটপটি ফুচকা আর ভিন্ন স্বাদের কাবাবও।
ঢাকা থেকে সরাসরি যাওয়া যায় কক্সবাজার। রাজধানীর পান্থপথ কিংবা মালিবাগে গেলেই পেয়ে যাবেন এসি, নন এসি বিভিন্ন কোম্পানির বাস। এসব বাস আপনাকে সরাসরি পৌঁছে দেবে কক্সবাজার শহরে। সোহাগ পরিবহন, সিল্ক লাইন, এস এ পরিবহন, বাগদাদ একপ্রেস, ইউনিক, শ্যামলী ইত্যাদি পরিবহনের বাস উল্লেখ যোগ্য। এসি/নন এসি ভেদে ৫৫০ থেকে ১৩০০ টাকার মাঝে পড়বে জনপ্রতি খরচ। এছাড়া প্লেনে করেও যাওয়া সম্ভব, জন প্রতি খরচ পড়বে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মাঝে।